ক্ষমার অযোগ্য যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে,
আর সেই ভুলের জন্যে যদি বদলে যায় ভৌগোলিক সীমা,
যদি আত্মজের নিক্ষিপ্ত তীর শূন্যতায় উড়ে গিয়ে
শক্তিশেল হয়ে বেঁধে তোমার শরীরে-
তুমি তবে কোন্ দণ্ড দেবে ?
যদি রাজদণ্ড দাও- আমি মাথা পেতে নেবো।
পিতা, একদিন তুমি ছিলে স্বপ্নের ভেতরে,
তোমার স্বপ্নের মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম
আমার অখণ্ড নীলাকাশ;
কিন্তু তুমি তো জানো পিতা, স্বচ্ছ সুন্দর সেই নীলাকাশকে
ঢেকে দেয় যে-শ্রাবণের ঘন কালো মেঘ
আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকে যে-বজ্রের হুংকার
উদ্ধত আক্রোশে গর্জে উঠে পৃথিবীকে ভস্মীভূত করে,
আসি সেই গর্জনের অগ্নি থেকে জেগে ওঠা বিভ্রান্ত বালক
কিছুতেই বুঝতে পারিনি
আমি তোমাকে আঘাত করে
আমারই অস্তিত্বের মূলে আঘাত করেছি।
তার জন্যে আমাকে এখন যে শাস্তি দেবে দাও-
আমি মাথা পেতে নেবো।
যদি রাজদণ্ড দাও- যদি নির্বাসন দিয়ে দাও
আফ্রিকার দুর্গম গহন অরণ্যে
আমি মেনে নেবো, এ-আমার আত্মঘাতী বিনাশের যোগ্য পুরস্কার।
পিতা, যদি জানতাম, আমারই ভুলের জন্যে
এতো রক্ত, এতো ক্লেদ জমা হবে পিতৃভূমিতে,
যদি জানতাম, নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে তোমারই বুকের রক্তে
রঞ্জিত হয়ে যাবে মানচিত্র আমার,
যদি জানতাম, মধ্যরাতে তোমারই ছায়ারা এসে
তোমাকেই বধ করবে নির্মম দু’হাতে;
যদি জানতাম, তোমার নিথর দেহ রক্তাপ্লুত পড়ে থাকবে
উপবাসী সিঁড়ির ওপরে;
যদি জানতাম, তোমার বক্ষ থেকে সিঁড়ি বেয়ে
নেমে যাবে সাত কোটি রক্তের ধারা-
তা হলে এই হাতের প্রতিটি আঙুল দিয়ে
আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতাম আমার উদ্ভ্রান্ত আত্মাকে,
আমি আমার চোখে বিঁধিয়ে দিতাম
অভ্রভেদী শিমুলের কাঁটা।
আমার বক্ষবিদীর্ণ আর্তচিৎকারে যদি তোমার ঘুম ভাঙতো
তুমি দেখতে পেতে, করজোড়ে তোমারই পায়ের কাছে
পড়ে আছে নতজানু তোমার সন্তান।
তুমি কী করে তাকে ক্ষমাহীন দুই হাতে ফেরাতে তখনি?
আমি জানি, পাহাড়ের অন্তরালে বয়ে যাওয়া
স্বচ্ছতরো ঝর্নাধারার মতো
তোমার হৃদয় ছিলো শান্ত স্নিগ্ধ নদী,
তোমার হৃদয় ছিলো বাউলের একতারা, ক্লান্ত ভাটিয়ালী।
পিতা, তুমি কি জানতে, তোমার হৃদয় থেকে উৎসারিত
এই জল একদিন সবকিছু ভুলে গিয়ে
তোমাকেই উগড়ে দেবে বঙ্গোপসাগরে?
তুমিহীন এই মাটি আর্তনাদ করে উঠবে
মধুমতী নদীটির তীরে?
যদি জানতে, যদি তুমি জানতে
পিতৃত্বের এই দায় তোমাকেই একদিন রক্তমূল্যে শোধ দিতে হবে;
তখনো কি তুমি এই স্বদেশের মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠে
পরাধীন মানুষের মুক্তিমন্ত্র হতে?
পিতা, এইখানে তুমি আজ নেই- তোমার ছায়ারা পড়ে আছে।
খুব ভোরে আকাশ বিদীর্ণ করে যে-রক্তিম সূর্য ওঠে পুবের আকাশে
সবুজ প্রকৃতির মধ্যে তার গাঢ় রং মিশে গিয়ে
যে-আশ্চর্য আভা ছড়িয়ে যায় দিগন্তে-দিগন্তে,
তার মধ্যে তোমাকে আমি দেখতে পাই।
আমার প্রতিমুহূর্তের নিশ্বাসের মধ্যে
তুমি চিরকালের বাতাস হয়ে ঢুকে যাও।
আমার সবটুকু অস্তিত্বের মধ্যে তোমার মৃত্যুহীন উপস্থিতি
আমাকেই তুমি করে তোলে;
তার মানে তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।
তবু তোমার উপস্থিতিহীন অস্তিত্বের ভয়ে শংকিত
একদল শিকারি তোমার ছায়ার ওপরে অন্ধকারে প্রলেপ
লাগিয়ে দিতে চায়;
একদিন তুমি যাদেরকে হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধে নিয়েছিলে,
তারাই তোমার অস্তিত্বের অহংকারের ওপরে
লেপ্টে দিতে চায় পঁচিশের কালো অন্ধকার
তুমিহীন তোমার অস্তিত্ব এসে ভর করে বঙ্গভূমিতে !
মানুষই তো ভুল করে পিতা
আমার এই দেহখানি সে-ভুলেরই দাস।
যদি পারো ক্ষমা কোরো অধম সন্তানে।
আর যারা তোমারই রক্তের দামে কেনা এই স্বদেশের
মাটিকেই বদলে দিতে চায়,
লাল ও সবুজের মানচিত্রে আঁকতে চায় কলংকতিলক;
তোমার ক্ষমার হাত একদিন যদি ঐ জলে-স্থলে অন্তরিক্ষে
ছুটে চলে যায়
সেই দিন আমাকেও নির্বাসন দিও-
এ-পৃথিবী পার করে ফেলে দিও অন্য কোনো গহন অরণ্যে।
যদি রাজদণ্ড দাও- যদি ফাঁসিকাষ্ঠে স্তব্ধ হয় এ-দেহ আমার
সব আমি মাথা পেতে নেবো;
শুধু আমি কিছুতেই মানবো না
আমার বুকের ’পরে চেপে থাকা আগস্টের সম্মিলিত ঘাতক আঁধার।
আর সেই ভুলের জন্যে যদি বদলে যায় ভৌগোলিক সীমা,
যদি আত্মজের নিক্ষিপ্ত তীর শূন্যতায় উড়ে গিয়ে
শক্তিশেল হয়ে বেঁধে তোমার শরীরে-
তুমি তবে কোন্ দণ্ড দেবে ?
যদি রাজদণ্ড দাও- আমি মাথা পেতে নেবো।
পিতা, একদিন তুমি ছিলে স্বপ্নের ভেতরে,
তোমার স্বপ্নের মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম
আমার অখণ্ড নীলাকাশ;
কিন্তু তুমি তো জানো পিতা, স্বচ্ছ সুন্দর সেই নীলাকাশকে
ঢেকে দেয় যে-শ্রাবণের ঘন কালো মেঘ
আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকে যে-বজ্রের হুংকার
উদ্ধত আক্রোশে গর্জে উঠে পৃথিবীকে ভস্মীভূত করে,
আসি সেই গর্জনের অগ্নি থেকে জেগে ওঠা বিভ্রান্ত বালক
কিছুতেই বুঝতে পারিনি
আমি তোমাকে আঘাত করে
আমারই অস্তিত্বের মূলে আঘাত করেছি।
তার জন্যে আমাকে এখন যে শাস্তি দেবে দাও-
আমি মাথা পেতে নেবো।
যদি রাজদণ্ড দাও- যদি নির্বাসন দিয়ে দাও
আফ্রিকার দুর্গম গহন অরণ্যে
আমি মেনে নেবো, এ-আমার আত্মঘাতী বিনাশের যোগ্য পুরস্কার।
পিতা, যদি জানতাম, আমারই ভুলের জন্যে
এতো রক্ত, এতো ক্লেদ জমা হবে পিতৃভূমিতে,
যদি জানতাম, নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে তোমারই বুকের রক্তে
রঞ্জিত হয়ে যাবে মানচিত্র আমার,
যদি জানতাম, মধ্যরাতে তোমারই ছায়ারা এসে
তোমাকেই বধ করবে নির্মম দু’হাতে;
যদি জানতাম, তোমার নিথর দেহ রক্তাপ্লুত পড়ে থাকবে
উপবাসী সিঁড়ির ওপরে;
যদি জানতাম, তোমার বক্ষ থেকে সিঁড়ি বেয়ে
নেমে যাবে সাত কোটি রক্তের ধারা-
তা হলে এই হাতের প্রতিটি আঙুল দিয়ে
আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতাম আমার উদ্ভ্রান্ত আত্মাকে,
আমি আমার চোখে বিঁধিয়ে দিতাম
অভ্রভেদী শিমুলের কাঁটা।
আমার বক্ষবিদীর্ণ আর্তচিৎকারে যদি তোমার ঘুম ভাঙতো
তুমি দেখতে পেতে, করজোড়ে তোমারই পায়ের কাছে
পড়ে আছে নতজানু তোমার সন্তান।
তুমি কী করে তাকে ক্ষমাহীন দুই হাতে ফেরাতে তখনি?
আমি জানি, পাহাড়ের অন্তরালে বয়ে যাওয়া
স্বচ্ছতরো ঝর্নাধারার মতো
তোমার হৃদয় ছিলো শান্ত স্নিগ্ধ নদী,
তোমার হৃদয় ছিলো বাউলের একতারা, ক্লান্ত ভাটিয়ালী।
পিতা, তুমি কি জানতে, তোমার হৃদয় থেকে উৎসারিত
এই জল একদিন সবকিছু ভুলে গিয়ে
তোমাকেই উগড়ে দেবে বঙ্গোপসাগরে?
তুমিহীন এই মাটি আর্তনাদ করে উঠবে
মধুমতী নদীটির তীরে?
যদি জানতে, যদি তুমি জানতে
পিতৃত্বের এই দায় তোমাকেই একদিন রক্তমূল্যে শোধ দিতে হবে;
তখনো কি তুমি এই স্বদেশের মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠে
পরাধীন মানুষের মুক্তিমন্ত্র হতে?
পিতা, এইখানে তুমি আজ নেই- তোমার ছায়ারা পড়ে আছে।
খুব ভোরে আকাশ বিদীর্ণ করে যে-রক্তিম সূর্য ওঠে পুবের আকাশে
সবুজ প্রকৃতির মধ্যে তার গাঢ় রং মিশে গিয়ে
যে-আশ্চর্য আভা ছড়িয়ে যায় দিগন্তে-দিগন্তে,
তার মধ্যে তোমাকে আমি দেখতে পাই।
আমার প্রতিমুহূর্তের নিশ্বাসের মধ্যে
তুমি চিরকালের বাতাস হয়ে ঢুকে যাও।
আমার সবটুকু অস্তিত্বের মধ্যে তোমার মৃত্যুহীন উপস্থিতি
আমাকেই তুমি করে তোলে;
তার মানে তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।
তবু তোমার উপস্থিতিহীন অস্তিত্বের ভয়ে শংকিত
একদল শিকারি তোমার ছায়ার ওপরে অন্ধকারে প্রলেপ
লাগিয়ে দিতে চায়;
একদিন তুমি যাদেরকে হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধে নিয়েছিলে,
তারাই তোমার অস্তিত্বের অহংকারের ওপরে
লেপ্টে দিতে চায় পঁচিশের কালো অন্ধকার
তুমিহীন তোমার অস্তিত্ব এসে ভর করে বঙ্গভূমিতে !
মানুষই তো ভুল করে পিতা
আমার এই দেহখানি সে-ভুলেরই দাস।
যদি পারো ক্ষমা কোরো অধম সন্তানে।
আর যারা তোমারই রক্তের দামে কেনা এই স্বদেশের
মাটিকেই বদলে দিতে চায়,
লাল ও সবুজের মানচিত্রে আঁকতে চায় কলংকতিলক;
তোমার ক্ষমার হাত একদিন যদি ঐ জলে-স্থলে অন্তরিক্ষে
ছুটে চলে যায়
সেই দিন আমাকেও নির্বাসন দিও-
এ-পৃথিবী পার করে ফেলে দিও অন্য কোনো গহন অরণ্যে।
যদি রাজদণ্ড দাও- যদি ফাঁসিকাষ্ঠে স্তব্ধ হয় এ-দেহ আমার
সব আমি মাথা পেতে নেবো;
শুধু আমি কিছুতেই মানবো না
আমার বুকের ’পরে চেপে থাকা আগস্টের সম্মিলিত ঘাতক আঁধার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন