Social Icons

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ব্যথা - রুদ্র গোস্বামী

একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ভালবেসে
তারপর কোনো এক অপ্রসন্ন বিকেলে
চোখের জলে ব্যথা আবাদ করে মানুষ।।

প্রত্যাখ্যান - রুদ্র গোস্বামী

তোমার প্রত্যাখ্যানের পাশে এখনো আমার মৃতদেহ পড়ে আছে
আমি প্রতিদিন তাকে পোড়াতে গিয়ে
তার বুকে আর একটা করে গোলাপ রেখে আসি

অভিশাপ - রুদ্র গোস্বামী

অভিশাপ দিয়েছে গাঁয়ের লোক
তোর সাথে আমার ভালোবাসা হোক . . .

বসন্তে বৃষ্টি চেয়ো না - রুদ্র গোস্বামী

বিষাদ ছিঃ ছিঃ অমন ছুঁয়ো না
এমন বসন্ত মাসে বৃষ্টি চেয়ো না

পরিযায়ী পাখি - রুদ্র গোস্বামী

যদি সে না’ও আসে তুমি এসো চাঁদ
জানালায় রেখেছি বিষাদ
দেখে যেয়ো কতো সুখে আছি ।
তুমিও তো সেই তার মতোই -
পরিযায়ী পাখি
ক্ষণকাল থাকো ভরে জানালা আমার ......

প্রশ্ন - রুদ্র গোস্বামী


তুই কাঁদলে নদীর জল
নদী কাঁদলে কি?
মেঘ কাঁদলে বৃষ্টি বলিস
আমি কাঁদলে কি?

তুই তাকালে চাঁদে দহন
চাঁদ তাকালে কি?
রাত তাকালে নষ্ট বলিস
আমি তাকালে কি?

তুই ছুঁলে গোলাপ আগুন
গোলাপ ছুঁলে কি?
আয়না ছুঁলে দুষ্টু বলিস
আমার ছোঁয়া কি?

তখন আমার প্রেম ছিল - রুদ্র গোস্বামী

আমার একটা গ্রাম ছিল
কিছু শ্যামলা রঙের গাছ
আর লালচে রঙের ফুল ছিল
একটা মাটির পথ ছিল
আঁকায় বাঁকায় দূর ছিল
আর দূরের নানান নাম ছিল
আমার একটা ঘর ছিল
কিছু হলদে রঙের দিন
আর কমলা রঙের রোদ ছিল
একটা আয়না সই ছিল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে টিপ ছিল
আর টিপের নানান রঙ ছিল
আমার একটা চাঁদ ছিল
কিছু জ্যোৎস্না ভরা রাত
আর রাতের ভিতর ঘুম ছিল
একটা পাখি ভোর ছিল
ভোরের নানান রূপ ছিল
আর রূপের ভিতর টান ছিল
আমার একটা নাম ছিল
একটা হাওয়ায় ওড়া মন
আর বুকের ভিতর গান ছিল
তখন আমার প্রাণ ছিল
তখন আমার প্রেম ছিল
এখন আমার নতুন ঘর
আর ঘরের ভিতর দুজন মানুষ
ভীষণ রকম পর

কবিকে - রুদ্র গোস্বামী

আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে পারো কবি ?
কেনোনা আমার এখন মন ভালো নেই ।
ভালবাসা প্রেম ওসব জটিল ব্যাপার ।
জানোই তো কবি যারা ভালো থাকে,
স্বপ্ন নামে তাদের চোখেই ।
যারা সুখে থাকে তারা করে স্নান চাঁদের আলোয়
যারা ভালো নেই তাদেরই থাকে অবসর -
একাকী হবার ।
শুধু নদী দিলে ডিঙি দিয়ো কবি
মেঘ দিলে দিয়ো তার আকাশ।
কেনোনা আমার এখন শুধু অবকাশ ...

ভালোবাসা - রুদ্র গোস্বামী

আজ রোদ উঠুক বৃষ্টি পড়ুক
           তাতে কি আসে যায়
                 তুই হাত ধরলেই চলে যাবো
                             যে দিকে দু'চোখ যায় ...

ভালোবাসার সংজ্ঞা - রুদ্র গোস্বামী

ভালোলাগা গুলো পায়ে পায়ে হেঁটে
                হৃদয়ের খুব কাছাকাছি এলে,
   কচি লাউয়ের ডগার মত বেড়ে ওঠে এক বোধ;
                                              তারই নাম, মানুষ বলেছে ভালবাসা ...

ছোঁয়াচ - রুদ্র গোস্বামী

আমি তোমায় ছোঁবো কী !
হাওয়ায় আমার মন পুড়ে যায়
গোলাপ ছোঁবো কী !

আমি মুক্তা নেবো কী !

জলের ছলেই চোখ ধেধে যায়
ঝিনুক ছোঁবো কী !


আমি হৃদয় নেবো কী !
চাঁদের আলোয় হাত পুড়ে যায়
আগুন ছোঁবো কী !
আমি স্বপ্ন ছোঁবো কী !
দেখেই তোমায় খুন হয়ে যাই
প্রেমিক হবো কী !

ফুলকি - রুদ্র গোস্বামী


ভুলে যাওয়া প্রেম
অবেলায় বাজিয়োনা এসরাজ
এমন রৌদ্র দিনে দু' চোখে বৃষ্টি এঁকো না।

আমার স্বপ্নস্পৃষ্ট চোখ এখনো প্রস্তুত নয়।
উদাস, এখনি আমাকে বৃষ্টি স্নানে ডেকো না।

তোরা সুখে থাক রাঙাফুল দীঘি।
তোরা সুখে থাক মোতিহার বিল।
আমার বসবাস
রোজ বারোমাস
যেখানে জলের রঙ নীল।

প্রেমিক হতে গেলে - রুদ্র গোস্বামী

ওই যে ছেলেটাকে দেখছ, পছন্দ মতো ফুল ফুটল না বলে
মাটি থেকে উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গাছটাকে ?
ছেলেটার ভীষণ জেদ , ও কখনও প্রেমিক হতে পারবে না ।

এই তো সেদিন কাঁচের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছিল বলে
কাঁচওয়ালার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কী বকা !
কাঁচওয়ালাতো থ’ !
সাদা কাঁচে রোদ ঢুকবে না এমন আবার হয় !

ছেলেটার খুব জেদ, ও শুধু দেখে আর চেনে
বুঝতে জানে না ।
প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না ।

ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয় ।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয় ।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না ।
তারা শুধু আকাশ হতে চায় ।

গাঙচিল - রুদ্র গোস্বামী

দু’হাত বাড়িয়ে আছি
কাছে এলে ঘর হবো।
তোমার উঠোন হবো
এঁকে বেঁকে গাছ হবো।
তোমার আঙুলে হবো
আঙুলের মিল ।
সোনার চামচ হবো
রুপার রেকাব হবো।
জল ভরা মেঘ হবো
কাঁখের কলস হবো।
তোমার চিবুকে হবো
কাজলের তিল।
নাচের ঘুঙুর হবো
সোনালী আবীর হবো।
জলের সাঁতার হবো
নদীদের চর হবো।
তোমার ব্যথায় হবো
ঝোড়ো গাঙচিল।
দু'হাত বাড়িয়ে আছি
ছুঁয়ে দিলে ঘর হবো।
তোমার আকাশ হবো
এঁকে বেঁকে গাছ হবো।
তোমার সিঁথিতে হবো
সিঁদুরের মিল ।

পোড়াবো সমুদ্র - রুদ্র গোস্বামী

স্বপ্ন গুলোকে আত্মহত্যা করিয়ে নিয়ে এলাম।
একটার নাম আকাশ,একটার নাম আলো,অন্যটা তুমি।
লাল, হলুদ, সবুজ, আমার দু'চোখে আর একটাও স্বপ্ন নেই।
এই দেখো আমার দুহাতে আগুন,এখন আমি সমুদ্র পোড়াতে যাব।

ফুলকি - রুদ্র গোস্বামী


জানি না সাঁতার
এপার ওপার
তবু নেমেছি জলে
তুই ডেকেছিস বলে

এ কেমন
ভাসাস নদী বল
কূল নাই তোর
তল নাই তোর
একূল ওকূল জল

তোমাকে ছুঁয়েছি যতবার
ততোবার ছুঁয়েছি দীর্ঘশ্বাস
আর নাম ধরে ডেকো না নদী
আমার শহরে এখন জিরচ্ছে বৃষ্টিমাস

সময় - রুদ্র গোস্বামী

কেমন আছো, কাকে বলবো ?
সবাই দিব্যি ভালো থাকার ভান করে আছে।
কথা রেখো, কাকে বলবো ?
সবার কাঁধে একটা করে না রাখা কথার পাহাড়।
কাকে বলবো, মনে রেখো ?
সবার হৃদপিণ্ডে টাঙান কয়েক প্রস্ত রঙিন মুখোশ।
কাকে বলবো, তুমি হাত ধরতে জানো ?
সবার মুঠো ভরতি স্বপ্ন খুনের ঋণ ।
কাকে বলবো, শুনতে পাচ্ছ ?
কেউ এখানে কান পেতে নেই ।
কাকে বলবো ? ইচ্ছে হলে আসতে পারো ।
সবাই যাবার জন্যে পা বাড়িয়ে প্রস্তুত ।
কাকে বলবো ? দেখে যাও,
তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি ।
সবার চোখে চওড়া ফ্রেমের রুপালী আকাশ ।

প্রেম: মৃত্যু অথবা ব্যাধি - রুদ্র গোস্বামী


মানুষ - রুদ্র গোস্বামী

মানুষ কখনো একা নয়
ভালবাসা চলে গেলে তার সাথে বাস করে বিষাদের দূত

দূরত্ব - রুদ্র গোস্বামী

হৃদয় কেমন তোর ?
- আকাশ যেমন
- তোর ?
ঘরের মতন ।
- আমায় নিবি ?
ধুস্ আকাশ নিয়ে কি
ঘরে ঢোকা যায় !
- তবে বললি যে ?
দেখলাম
- কি ?
তুই শুধু
আকাশ হতে জানিস ।

একা - রুদ্র গোস্বামী


একা যেতে চাওয়া আর যাওয়া দুটো এক নয়
প্রতারক স্মৃতি ও চোখের জল, এই সব ছেড়ে
আসলে মানুষ কোথাও একা যেতে পারে না ।

ঋণ - রুদ্র গোস্বামী


সুখ দুঃখ এই সব আসলে জীবনের ঋণ
মানুষ একদিন মৃত্যু দিয়ে শোধ করে ।

মুখপুড়ি - রুদ্র গোস্বামী

হৃদয়ের থেকে সুস্বাদু আর কি আছে
জন্ম দেবো , মৃত্যুও নিস
ভালোবাসা আয় মুখপুড়ি খা আমাকে

স্বপ্ন - রুদ্র গোস্বামী

কাচের স্বপ্ন আমার ভেঙো না কঠিন আঘাতে
বহু বিনিদ্র রাত গেছে কেটে রঙে সাজাতে ...

অভিরূপ তোমাকে - রুদ্র গোস্বামী

ঘরে ফেরা কি এতটা কঠিন ?
ঘর তো আর আকাশ নয়, ফিরতে গেলে পাখি হতে হয় ।
পাখির মতো দুটো ডানা থাকতে হয় ।
পায়ে হেঁটে এতো দূরেও যাওয়া যায় অভিরূপ ?
যেখান থেকে ফিরতে গেলে আকাশ পেরুতে হয় ?
শূন্য অপেক্ষায়ও একটা খাঁ খাঁ নক্ষত্রের তাপ থাকে অভিরূপ
তুমি কখনও বুঝবে না অপেক্ষার শূন্যতা একটা মানুষকে যে
কি ভীষণ নিঃস্ব করে দিতে পারে।
যেখান থেকে তাকালে মৃত্যুকেও প্রিয় মনে হয়।
অথচ প্রত্যেক দিন এই ক্ষতবিক্ষত শূন্যতার ভিতর আমি
ফোঁটায় ফোঁটায় ছড়িয়ে পড়তে দেখছি আমার নিজের শরীর।
অপেক্ষার যন্ত্রণাকে তুমি কখনো অনুভব করেছ অভিরূপ ?
যে পাখিটাকে এনে তুমি আমার বুকের মধ্যে পুষে রেখেছিল
তোমাকে ছুঁতে না পারার কষ্টে যন্ত্রণায় তার পাখা থেকে
রোজ খসে পড়ছে একটা একটা করে পালক ।
আর সেই পালকের উপর জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য উপজীবী ছত্রাক।
এতো নৃশংসতার সাথে খেয়ে ফেলছে ওরা পালকের সবটুকু উড়ান
পাখিটার বেঁচে থাকার কথা ভাবতে গিয়েই আমার কান্না পায় ।
যে চোখে জলের ফোঁটা দেখলে স্বর্ণমুদ্রা বলে রুমালে কুড়িয়ে নিতে
সে চোখের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত এখন
অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো দাপিয়ে বেড়ায় তেরোটা নদী।
তাদের অবাধ্য স্রোত খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়
আমার বেঁচে থাকার লক্ষ লক্ষ দিন, আমার ভালো থাকার অসঙ্খ্য সময়।
সাধারণ মেয়েদের কোনো পুনর্জন্ম থাকে না ।
অপেক্ষার জীবাশ্ম বয়ে বয়ে যে ভালবাসা আজ আমার রক্ত প্রবাল
আমি কিছুতেই তাকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিতে পারবো না অভিরূপ ।
আমি বাঁচব অভিরূপ মৃত্যুর পাঁজরে পাঁজরে আমি বাঁচব
তুমি যতদিন বেঁচে আছো ।
.
.
" কাব্যগ্রন্থ তবুও বৃষ্টি নামুক" থেকে ।

'সুখ সায়র' - রুদ্র গোস্বামী

সুখের সায়রে আর তুমি স্নানে ডেকো না নিষাদ
হৃদয়ের কাছে এখনো জমা রাখা আছে
তোমার রেখে যাওয়া এক মহাকাব্য বিষাদ ...

এমনও তো হয় - রুদ্র গোস্বামী

এমনও তো হয়
কারও চোখে জল গড়ালো
আর তুমি ভেসে গেলে সমুদ্দুর
এমনও তো হয়
কারও মুখে হাসি এলো
আর তুমি কুড়িয়ে পেলে রোদ্দুর
কখনও এমনও তো হয়, বলো -
পাশাপাশি খুব কাছাকাছি দুজনায়
অথচ কেউ কারও নয়

উৎসর্গ : ওপার এপারের দুই কিশোর কিশোরী বন্ধুকে ...

রাজা - রুদ্র গোস্বামী


প্রকৃত রাজার সিংহাসন কি প্রয়োজন ?
একজন ক্ষুধার্তকে ডেকে নিয়ে যখনই তুমি খেতে দাও
সেই মুহূর্তেই তুমি রাজা
...

একটি পাহাড়ের গল্প - রুদ্র গোস্বামী ।

ক' এর ভালবাসা ছিল খাঁ খাঁ কৃষ্ণচূড়া আর ম' ভালবাসতো আগুন আগুন পলাশ
তারপর আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে খেলতে দুজনেই একদিন পুড়ে হোলো কাঠ ...
এই গল্পটা একটা অল্পবয়সী পাহাড়কে বলতে বলতে একটা কিশোরী নদী
মেঘ হয়ে উড়ে চলে গেলো অনে এ এ এ ক দূরে ...
সেই থেকে পাহাড়টা হয়ে উঠলো আরও পাথরের
আমাদের এ পাড়ায় ছাই রঙের যে পাহাড়টাকে তোমরা দেখো ?
তা না হোলে সে পাহাড়টাও একদিন খুব সবুজ ছিল ...

চাঁদের ভিতর চাঁদ ভাঙে - রুদ্র গোস্বামী

আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক আমার আকাশে
আমার কষ্টে সে নিজেকে উজাড় করে কাঁদুক।
তার তিলের মতো কলঙ্ক থাকুক,
আলোর মতো রূপ থাকুক।
তার দিকে দেখতে দেখতে আমি ভাবি
সব থেকে সুন্দর দৃশ্যটি বুঝি এই ।
আমার তাকে দেখতে ভালো লাগুক।
তাকে ছুঁয়ে আমি বলি,
সে আমার ভীষণ রকম সুখ।
আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক আমার আকাশে
তার জন্ম শুধু আমার জন্যে থাকুক।
তার মৃত্যু শুধু আমার জন্যে থাকুক।
তাকে পেয়ে আমি বলি,
তার জন্যে আমি এর আগেও বহুবার জন্মেছিলাম।
তার জন্যে আমার অপেক্ষা ছিল,অশ্রু ছিল।
অজস্র চিঠিতে তাকে আমি ভালবাসি লিখেছিলাম।
আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক আমার আকাশে
তার আলো শুধু আমার জন্যে থাকুক।
তার কথা শুধু আমার জন্যে থাকুক।
এতো রূপের মধ্যে, এতো প্রাণের মধ্যে
সে শুধু আমাকেই ফিরে দেখুক
এমন তো নয় মেয়ে বলে কেউ রূপ খুঁজবো না
এমন তো নয় কালো মেয়ের চাঁদ ভাবতে নেই ...।

মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর - রুদ্র গোস্বামী

কোথায় যাচ্ছ ?
- মেঘের মাঠে ।
কেন ?
- জিজ্ঞেস করতে ।...
কি ?
- এতো কষ্ট নিয়ে,
মেঘ কার কাছে যায় !
যদি না বলে ?
- ফিরবো না ।
তোমার তো খুব জেদ !
- উঁহু, ভালবাসা ।
মেঘের মাঠে মেঘ যে নেই ।
- একটু আগে এই যে ছিল !
হয়তো ছিল,
বৃষ্টি যে তার গা ধুইয়েছে ।
এখন সে নেই ।
- কোথায় গেছে ?
রঙধনুটা যেখানে তার ঘর বেঁধেছে ?
ওই সেখানে ।
- তাহলে যাই ঝর্ণা-বাড়ি ।
কেন ?
- জিজ্ঞেস করতে ।
কি ?
- মেয়ের কেন ঘুম আসে না,
কান্না নিয়ে জেগেই থাকে,জেগেই থাকে !
যদি না বলে ?
- দাঁড়িয়ে থাকবো পাথর যেমন,
তোমার ভারী জেদ ।
উঁহু, ভালবাসা ।
ঝর্ণা-বাড়ি ঝর্ণা যে নেই ।
- এই যে তাকে দেখেছিলাম ,
শব্দ করে কাঁদছিল ?
হয়তো ছিল, এখন সে নেই ।
সূর্য তাকে নিয়ে গেছে পথ দেখিয়ে ।
- কোথায় গেছে ?
যেখানে তার পাহাড় প্রেমিক আকাশ হোলো,
ওই সেখানে।
- তুমি তো বেশ বলতে জানো,কাব্যি পড়ো ?
উঁহু, ভালবাসি ।
- কি যেন নাম ?
ক’দিন আগে পাহাড় ছিল, এখন আকাশ ।।

রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

চুম্বন - সুজাতা গঙ্গোপাধ্যায়

তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁলো
যদিও এ প্রথমবার নয়,
চুম্বন তো আগেও বহুবার
এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়।
যেমন সব ভয়ের গল্পে-
দৈত্য দানো-রাক্ষস আর ক্ষয়,
তিলে তিলে শুকোয় রাজকুমারী
অন্ত্যঃমিলে রাজপুত্রের জয়।
তবুও খুব ভিতরে বাঁধাহীন-
লড়াই চলে শুম্ভ-নিশুম্ভের,
প্রথম বলে ফুলটি ছিঁড়ে খাব
দ্বিতীয় বলে হাত পাততে শেখ্‌!
আসলে তুমি দীর্ঘ শাল-মূলী
সবার মাথা ছাড়িয়ে তোর বর
তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁলো
আর যা কিছু- অকিঞ্চিতকর

শুক্রবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৫

তুই কি আমার দুঃখ হবি? - আনিসুল হক

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি,
নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

অমিমাংসিত সন্ধি - হেলাল হাফিজ

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।

ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো

অপূর্ণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।

থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।

এই বুকে‬ - মহাদেব সাহা

এই বুকে ভূমিকম্প সয়, বিচ্ছেদ সহে না,
অগ্নিকান্ড সয়, অশ্রুজল সহে না, সহে না ;
এই বুকে সবই সয়, শুধু সহে না বিরহ
সহে না কেবল এইভাবে ঘুরিয়ে নেয়া মুখ,
এই বুকে কতকিছু সয়, দুঃখ-পরাজয়
কতো ঝড়জল সয় বুকে, উপেক্ষা সহে না ;
এই বুকে সয় কতো মেঘরৌদ্র, অন্তহীন খরা
শুধু তোমার আঘাত বুকে সহে না, সহে না ।
সয় কাঁটা, শুধু সয় না তোমার ভুকে যাওয়া
এই বুকে জলোচ্ছাস সয়, ক্রন্দন সহে না,
এই বুকেকতোকিছু সয়, দূরত্ব সহে না ;
এই বুকে সবই সয়, শুধু বিচ্ছেদ সহে না
মরুঝড় সয় বুকে, তোমার অশ্রু সহে না ।

বৃহস্পতিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৫

অপেক্ষা - দিব্যেন্দু পালিত

অন্যমনে একদিন ভালোবাসা কড়া নেড়ে যাবে;
অপেক্ষায় থেকো।

পদশব্দে মনে হবে বাতাসের নিষ্ঠুর শাসানি
বহুদূরে শাণ দিচ্ছে ভয়ানক কৌতুকের থেকে।
তোমার দু’পাশে রাস্তা, সাজানো হর্ম্যের
অলিন্দ থম্‌কে আছে, চারিদিকে আলোর চাতুরি
স্বপ্নের ভিতর কিংবা মৃত্যুর ভিতর কিংবা
জাগরণে, সূর্যের ভিতর
একাকী, নিঃসঙ্গ, এই আত্মঘাতী শোকের ভিতর
থেকো, তবু অপেক্ষায় থেকো।

সোমবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রস্থান - হেলাল হাফিজ

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে।